১০ হাজার টাকায় ২৫ টি ব্যবসার আইডিয়া

১০ হাজার টাকায় ২৫ টি ব্যবসার আইডিয়া

১০ হাজার টাকায় ২৫ টি ব্যবসার আইডিয়া

ভূমিকা: বর্তমান সময়ে চাকরির পাশাপাশি নিজস্ব ব্যবসা করার আগ্রহ অনেক বেড়ে গেছে। কিন্তু অধিকাংশ মানুষই অর্থ সংকটে ভুগে ব্যবসার চিন্তা বাদ দিয়ে দেন। তবে জানলে অবাক হবেন, মাত্র ১০ হাজার টাকা মূলধনে আপনি শুরু করতে পারেন ছোট কিন্তু লাভজনক অনেক ধরনের ব্যবসা। আজ আমরা আলোচনা করব এমন ২৫টি ব্যবসার আইডিয়া নিয়ে, যেগুলো আপনি খুব কম পুঁজিতে শুরু করে ধীরে ধীরে বড় পরিসরে বিস্তার করতে পারেন।

১. মোবাইল রিচার্জ ও বিকাশ এজেন্ট ব্যবসা

আজকের দিনে মোবাইল রিচার্জ এবং মোবাইল ব্যাংকিং সেবা মানুষের নিত্যদিনের অংশ। আপনি যদি মোবাইল রিচার্জ, বিকাশ, রকেট, নগদ এর মত মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দিতে পারেন, তাহলে এটি একটি লাভজনক ব্যবসা হতে পারে। আপনি শুধু একটি মোবাইল ফোন, কিছু ক্যাশ ব্যালেন্স এবং একটি ছোট্ট দোকান বা কিয়স্ক নিয়ে শুরু করতে পারেন। শহর বা গ্রাম যেখানেই হোক, এই ব্যবসার চাহিদা সব জায়গাতেই রয়েছে।

২. Used মোবাইল ও এক্সেসরিজ বিক্রয়

পুরনো মোবাইল ফোন কিংবা চার্জার, কভার, হেডফোনের মতো এক্সেসরিজ কম দামে কিনে অনলাইনে বা দোকানে বিক্রি করা যায়। এই ব্যবসার জন্য বড় মূলধনের প্রয়োজন হয় না, ১০ হাজার টাকাতেই বেশ কিছু পণ্য সংগ্রহ করে বিক্রি শুরু করতে পারবেন।

৩. চায়ের দোকান

একটি সাধারণ চায়ের দোকান প্রতিদিন ভালো পরিমাণে আয় এনে দিতে পারে। শহর বা গ্রাম  যেখানেই হোক, ১০ হাজার টাকায় চুলা, কাপ, টেবিল, চা পাতা ও দুধ কিনে ব্যবসা শুরু করা যায়। প্রতিদিন সকালে ও সন্ধ্যায় চায়ের দোকানে ভিড় লেগেই থাকে।

৪. হস্তশিল্প বা হ্যান্ডিক্রাফট বিক্রয়

আপনি যদি নিজে কিছু তৈরি করতে পারেন, যেমন বুটিক, পাটের ব্যাগ, হাতে তৈরি অলঙ্কার – তাহলে তা খুব সহজেই অনলাইন কিংবা স্থানীয় মার্কেটে বিক্রি করতে পারেন। ১০ হাজার টাকায় ২৫ টি ব্যবসার আইডিয়া মাল কিনে ঘরে বসেই ব্যবসা শুরু করা যায়।

৫. টিফিন বা হোমমেইড খাবার সরবরাহ

অনেক কর্মজীবী মানুষ, শিক্ষার্থী, ব্যাচেলর লোকজন বাইরে খাওয়ার জন্য নির্ভর করেন হোমমেড খাবারের উপর। আপনি চাইলে একটি নির্দিষ্ট এলাকায় হোম কুকিং সার্ভিস শুরু করতে পারেন। প্রতিদিন নির্দিষ্ট টাকার বিনিময়ে প্যাকেট করা টিফিন ডেলিভারি করে দিতে পারেন। রান্নার জন্য একটি ভালো হস্তশিল্প জ্ঞান, গ্যাস, কাঁচামাল এবং কিছু প্যাকেটিং খরচ হলেই চলবে।

৬. ডিম ও মুরগির ছোট খামার

একটি ছোট পরিসরের মুরগির খামার শুরু করতে ১০ হাজার টাকা যথেষ্ট। কিছু দেশি বা ব্রয়লার মুরগি কিনে বাড়ির পেছনে খাঁচায় পালন করা যায়। কিছুদিনের মধ্যে ডিম বিক্রয় করেই লাভ আসতে শুরু করে।

৭. অনলাইন কাপড় বিক্রি

বর্তমানে ফেসবুক পেজ বা ই-কমার্স সাইটের মাধ্যমে ঘরে বসেই জামাকাপড় বিক্রি করা সম্ভব। ১০ হাজার টাকায় কিছু থ্রি-পিস, শাড়ি, টি-শার্ট কিনে শুরু করতে পারেন। ছবিগুলো আকর্ষণীয়ভাবে তুলে ধরলে খুব দ্রুত অর্ডার আসবে।

৮. ফুলের টব ও গাছ বিক্রি

ফুল ও গাছপালা প্রেমিকদের জন্য এটি একটি দারুণ ব্যবসা হতে পারে। আপনি বিভিন্ন ধরনের শো-পিস গাছ, ফলের চারা, ভেষজ গাছ, ওষধি গাছ টবসহ বিক্রি করতে পারেন। ফুল গাছ যেমন গাঁদা, রজনীগন্ধা, বেলি ইত্যাদি টবসহ বিক্রি করে ভালো লাভ করা যায়। আপনি চাইলে ফেসবুক পেজ ব্যবহার করেও গাছের ছবি পোস্ট করে বিক্রি করতে পারেন।

৯. লিফলেট ও পোস্টার বিতরণ সার্ভিস

ছোট কোম্পানি, কোচিং সেন্টার বা দোকানগুলো তাদের প্রচারের জন্য পোস্টার, লিফলেট বিলি করে। আপনি ১০ হাজার টাকায় কিছু কর্মী ও প্রিন্টিংয়ের খরচ নিয়ে এই সার্ভিস শুরু করতে পারেন।

১০. সাবান ও ডিটারজেন্ট তৈরি

বর্তমানে ঘরোয়া পদ্ধতিতে তৈরি করা সাবান ও ডিটারজেন্টের চাহিদা বাড়ছে। ইউটিউব দেখে বা প্রশিক্ষণ নিয়ে আপনি সাবান তৈরি করে প্যাকেট করে বাজারজাত করতে পারেন।

১১. শিশুদের খেলনা বিক্রি

চাইনিজ বা দেশি খেলনা পাইকারি বাজার থেকে কিনে আপনি পাড়ায় পাড়ায় বা অনলাইন পেজে বিক্রি করতে পারেন। খেলনার ব্যবসায় লাভের হার অনেক বেশি এবং মূলধনও কম লাগে।

১২. মোবাইল কভার প্রিন্টিং

আপনি চাইলে মোবাইল কভারে নাম, ছবি বা ডিজাইন প্রিন্ট করে দিতে পারেন। ১০ হাজার টাকায় প্রাথমিক কাঁচামাল ও প্রিন্টার ভাড়া নিয়ে কাজ শুরু করা সম্ভব।

১৩. গ্রাফিক ডিজাইন সার্ভিস

আপনার যদি গ্রাফিক ডিজাইনের দক্ষতা থাকে, তাহলে আপনি ঘরে বসে ফাইভার, আপওয়ার্ক বা ফেসবুক মার্কেটিং এর মাধ্যমে বিভিন্ন গ্রাফিক ডিজাইনের কাজ করতে পারেন। একটি মোবাইল, ল্যাপটপ এবং কিছু সফটওয়্যার ব্যবহার করেই লোগো ডিজাইন, ব্যানার, পোস্টার তৈরি করে বিক্রি করতে পারেন।

১৪. কলম ও স্টেশনারি বিক্রি

ছোট খরচে কলম, পেনসিল, খাতা, রাবার, স্কেল কিনে স্কুলের সামনে বা পাড়ায় বিক্রি করতে পারেন। এই ব্যবসা খুব দ্রুত ক্যাশফ্লো সৃষ্টি করে এবং লাভজনক। ১০ হাজার টাকায় ২৫ টি ব্যবসার আইডিয়া

১৫. ছোট কসমেটিকসের দোকান

মেয়েদের ছোটখাটো প্রসাধনী জিনিস যেমন পাউডার, কাজল, চুলের ক্লিপ ইত্যাদি কিনে পাড়ায় দোকান খুলে বিক্রি করা যায়। খুব অল্প পুঁজিতে এই ব্যবসা শুরু করা সম্ভব।

১৬. রেশমি চুড়ি ও গয়না বিক্রি

আপনি চাইলে হ্যান্ডমেইড রেশমি চুড়ি, কানের দুল তৈরি করে অনলাইন বা মেলার মাধ্যমে বিক্রি করতে পারেন। ১০ হাজার টাকায় ভালো পরিমাণ কাঁচামাল কেনা সম্ভব।

১৭. ফটোকপি ও কম্পিউটার প্রিন্টিং

ছোট একটি জায়গা নিয়ে ফটোকপি ও প্রিন্টিংয়ের কাজ শুরু করতে পারেন। প্রাথমিকভাবে একটি প্রিন্টার ভাড়া নিয়েও ব্যবসা শুরু করা যায়।১০ হাজার টাকায় ২৫ টি ব্যবসার আইডিয়া এই গুলোই হয় । 

১৮. ভ্রাম্যমাণ ফল বিক্রি

ফল কিনে আপনি পুশকার্ট বা ভ্যানগাড়িতে করে পাড়ায় পাড়ায় বিক্রি করতে পারেন। মৌসুমি ফল বা দেশি ফল যেমন আম, কলা, পেঁপে, তরমুজ খুব চাহিদাসম্পন্ন।

১৯. নারিকেল তেল তৈরি ও বিক্রি

ঘরে বসেই নারিকেল থেকে প্রাকৃতিক তেল তৈরি করে বিক্রি করা যায়। বাজারে এখন অনেকেই কেমিকেলমুক্ত প্রাকৃতিক তেলের চাহিদা রাখে। আপনি নারিকেল কিনে ঘরে ভাঙিয়ে তেল তৈরি করে ফেসবুক বা বাজারে বিক্রি করতে পারেন। প্যাকেট করে দিতে পারলে দাম আরও বেশি পাওয়া যায়।

২০. অনলাইন ফটো এডিটিং সার্ভিস

ছবি রিটাচিং, ব্যাকগ্রাউন্ড রিমুভ, পাসপোর্ট সাইজ ছবি তৈরি ইত্যাদি কাজ ফেসবুক পেজে সার্ভিস আকারে দিয়ে আয় করা যায়। মোবাইল দিয়েই শুরু করা সম্ভব।

২১. ছোট রকমারি দোকান

চিপস, বিস্কুট, ক্যান্ডি, পানির বোতল ইত্যাদি কিনে বাড়ির সামনে বা বাজারে ছোট দোকান দিয়ে বিক্রি করতে পারেন। স্কুল বা ব্যস্ত রাস্তার পাশে হলে ভালো চলবে।

২২. ফেসবুক মার্কেটিং সার্ভিস

আপনি যদি ফেসবুক ব্যবহার জানেন, তাহলে ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য ফেসবুক পেইজ খোলা, পোস্ট তৈরি, বুস্ট করানো ইত্যাদি সার্ভিস দিতে পারেন।

২৩. ঘরোয়া টেইলারিং সার্ভিস

যারা সেলাই জানেন, তারা বাড়ির একটি কোণে টেইলারিং এর কাজ শুরু করতে পারেন। ১০ হাজার টাকায় একটি সাধারণ সেলাই মেশিন, সুতা, কাপড় কিনে ব্যবসা চালানো যায়।

২৪. ইউটিউব ভিডিও তৈরি

বর্তমানে ইউটিউব একটি বড় আয়ের উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে। আপনি ভিডিও বানানোর আইডিয়া থাকলে এবং কন্টেন্ট ভালোভাবে তৈরি করতে পারেন, তাহলে এটি একটি আয়ের মাধ্যম হতে পারে। শুধুমাত্র মোবাইল দিয়ে ভিডিও তৈরি করে আপলোড করা যায়। যদি ভিডিওগুলো মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে, তাহলে ইউটিউব থেকে আয় শুরু হবে।

২৫. পোলাও বা বিরিয়ানি বিক্রি

হাতে যদি ভালো রান্নার দক্ষতা থাকে, তাহলে পাড়ায় পাড়ায় প্যাকেট করে পোলাও-বিরিয়ানি বিক্রি করা সম্ভব। শুরুতে বন্ধু বা পরিচিতদের দিয়ে অর্ডার শুরু করতে পারেন।

উপসংহার

মাত্র ১০ হাজার টাকায় ব্যবসা শুরু করা অসম্ভব নয়, বরং সঠিক পরিকল্পনা, পরিশ্রম ও ধৈর্য থাকলে ছোট ব্যবসা থেকেই বড় হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। প্রতিটি ব্যবসার পেছনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সৎ মনোভাব, সময়মতো ডেলিভারি এবং ক্রেতার সন্তুষ্টি। আপনি যদি আপনার আগ্রহ, দক্ষতা ও সময়কে কাজে লাগিয়ে যেকোনো একটি ব্যবসা শুরু করেন, তাহলে তা ভবিষ্যতে বড় আকার ধারণ করতেও সময় নেবে না।

পোস্ট করা হয়েছে:

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *